একজন স্বপ্নবাজ যোদ্ধার গল্প !

একজন স্বপ্নবাজ যোদ্ধার গল্প !

প্রতি ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার পর রুমন ফোন করত, “স্যার এবারো GPA-4 out of 4 পেয়েছি”; মনে মনে ভাবতাম পলিটেকনিকে GPA-4 পাওয়া কি এত সহজ নাকি, নইলে সব সময় তা কেমনে পায়! অথচ এই ছেলেটির খবর আমরা যখন পাই তখন অর্থের পড়াশুনা বন্ধ করে বাড়ী চলে যাওয়ার মত অবস্থা। বাবা আছেন কিন্তু তিনি ওদের কোন দায়িত্ব পালন করেন না; ওর মা ওকে পড়াশুনার খরচ দিতে পারেন না, বরং ওকেই টিউশনি করে মা আর বৃদ্ধ দাদাকে খরচ দিতে হয়। গত ৫ বছরের বেশী সময় ধরে জাপান প্রবাসী এক মোরাল প্যারেন্ট রুমনের পাশে আছেন!

রুমনের স্বপ্ন ছিল DUET এ পড়ার। কিন্তু ওখানে কোচিং করার খরচ ওর ছিল না। ও সিদ্ধান্ত নিল কোচিং এ ছয় মাস পরে যাবে। এই ছয় মাসে মাগুরা থেকে প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু টাকা জমিয়ে, বাড়িতে একটা গরু আছে সেটা বিক্রয় করে এক বছরের খরচ ম্যনেজ করে গাজিপুর কোচিং এ যাবে। সেই ভাবে কাজ করল, গাজীপুর মেসে থেকে দুই বারে খাবার তিনবার খেয়ে আবার কোন সময় না খেয়ে থেকে ডুয়েট কোচিং করে। প্রথম পরীক্ষা দিল কিন্তু প্রথমবার চান্স না পাওয়া হতাশায় ভেঙ্গে পড়ল, তবুও হাল ছাড়েনি! কিছু দিন বাড়িতে থেকে আর কিছু টাকা জমিয়ে আবার গাজীপুরে এসে নতুন উদ্দামে পড়া লেখা শুরু করল। স্বপ্ন একটাই ডুয়েট, সেটা যে কোন উপায় হোক। দ্বিতীয় বার দুইটা সাবজেক্ট পরিক্ষা দিল।

আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবার আল্লাহ্‌ নিরাশ করেননি; দুই বিষয়েই চান্স পেয়েছে। রুমন তার সপ্ন পুরনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। একদিন সে ভাল ইঞ্জিনিয়ার হবে, মায়ের দুঃখ ভুলাবে। রুমনের পাশে আমরা থাকব, যতদিন ওর প্রয়োজন হয়! দুঃখী ছেলেটির খুশির খবর!

অফিসের কাজে বিজি ছিলাম; একজন মোরাল চাইল্ড বারবার ফোন দিচ্ছে; কেটে দেওয়ার পরও দিচ্ছে। মেজাজটা একটু খারাপই হলো; কারন মোরাল চিলড্রেনদের বারবার বলেছি সরাসরি ফোন না দিতে, sms দিতে; কখন কোন অবস্থায় থাকি! আর এই ছেলে ফোন কেটে দেওয়ার পরও ফোন দিয়ে যাচ্ছে। পরে আমি একটা ম্যাসেস পাঠালাম, SMS plz! ফিরতি ম্যাসেজে যে রিপ্লাই এল আমি সব কাজ ফেলে নিজেই ফোন দিলাম!

স্যার আমি রাজশাহী ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি,পজিশন — (একদম প্রথম দিকে), যে সাবজেক্ট চাইব সেটাই পাব; স্যার কোন সাবজেক্ট নিব বলেনতো… এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল!  আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে কথা জড়িয়ে আসছিল।

অনেকের জন্য হয়ত এটা খুব একটা বড় সংবাদ না। কিন্তু মামুনের জন্য এটা অনেক বড় স্বপ্ন পূরণ। সকল পরীক্ষায় GPA-5 পেয়ে খুশিতে শহরের কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিল। বাবা মারা গেছেন ছোটবেলায়, থাকে নানা বাড়ী, কয়েক বছর আগে নানা-নানীও মারা গেছে; মামারা একটা থাকার রুম দিয়েছেন, সেখানেই ওদের সংসার। মায়ের নির্দিষ্ট কোন অ্যায় নেই। শহরে এসে বুঝতে পারে এখানে থাকা খাওয়ার খরচ তার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। পড়াশুনা একপ্রকার যখন বন্ধ হবার পথে তখন আমরা ওর খোঁজ পাই। গত প্রায় ২ বছর যাবত জাপান প্রবাসী এক মোরাল প্যারেন্ট ওর পাশে থেকে ওকে সাহায্য করে যাচ্ছেন।

সামনে আরো কিছু ভার্সিটির রেজাল্ট দিবে, সেখানেও হয়ত ও চান্স পাবে। যেখানেই পড়ুক, মামুন ভালমানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হোক; ওর মায়ের মুখে হাসি ফোটাক, এটাই আমাদের কামনা। আমরা মামুনের পাশে আছি, থাকব যতদিন ওর প্রয়োজন!  

মোজাম্মেল এর গল্প

মোজাম্মেল এর গল্প

মোজাম্মেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র, ওর ব্যাচের মধ্যে ওর পজিশন ২য়। এ বছর গণিত অলিপিয়ারডে ঢাকা (উত্তর) জেলায় ৩য় স্থান অধিকার করেছে। অদম্য মেধাবী এই ছেলেটির জীবন সংগ্রাম শুরু হয়েছে সেই ছোট বেলা থেকে। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম ওর।

দিনমুজুর বাবার সামান্য আয়ে সংসার-ই ঠিক মত চলেনা, সেখানে পড়াশুনা করা তো বিলাসিতা! কিন্তু ছোটবেলা থেকে পড়াশুনার প্রতি ওর প্রচন্ড ঝোক; তাই নিজেই পরিশ্রম করে পড়াশুনার খরচ চালাতে থাকে। চায়ের দোকানে, ধানের ক্ষেতে, চালের চাতালে কাজ করে তার ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনাটা চালিয়ে নিতে থাকে।

পরিশ্রমের কাজ করতে গিয়ে দুবছর তাকে  পড়াশুনা থেকে বাইরেও থাকতে হয়েছে। এভাবেই সংগ্রাম করে গ্রামের স্কুল-কলেজ থেকে SSC, HSC তে GPA-5 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

কোনরকম কোচিং করা ছাড়া মাত্র ২/৩ টি ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে ও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল বিষয়ে চান্স পেয়েও সময় মত টাকা জোগাড় করতে না পারার কারনে ভর্তি হতে পারেনি। পরে জাহাঙ্গীরনগর এসে ভর্তি হয়। এখানে এসে ওর সংগ্রাম আরো বেড়েছে। ওর ছোট বোনও পড়াশুনায় খুব ভাল, তাই নিজের কাছে নিয়ে এসে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে। এখন দু’জনের খরচ-ই ওকে চালাতে হয়।

Moral Parenting এর বৃত্তি আর টিউশনির উপর নির্ভর করে চলছে ওদের পড়াশুনা। অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য ওর পড়াশুনার ক্ষতি হয়, শরীরের উপরও কিছুটা প্রভাব পড়েছে; কিন্তু ওর স্মারটনেস, দৃঢ় মনোবল আর দৃপ্ত দৃষ্টি সব কিছুকে হার মানিয়েছে। ওর স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার, এই স্বপ্ন পুরনে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মোজাম্মেজ এর Moral Parent ডঃ ফেরদাউসী, উনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক । আমরা মোজাম্মেলের সংগ্রামে কিছুটা সাথি হতে পেরে গর্বিত।

জ্যোতি

জ্যোতি

ভাঙ্গা ঘরে ‘জ্যোতি’ ছড়াচ্ছে জ্যোতি !!
২০১০ সালে তিনটি কন্যা সন্তান রেখে মারা যান জ্যোতির বাবা। বাবা মারা যাবার পর সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল; দাদা-চাচা রা তেমন খোঁজ খবর নেন না। জ্যোতিরা থাকে নানা বাড়ীতে; নানাদের অবস্থাও নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

মা প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মেয়ে গুলোকে আলোর মুখ দেখাতে। বড় মেয়ে হিসাবে মায়ের পরিশ্রম তার উপরও কিছুটা এসে পড়ে। এত কিছুর পরও জ্যোতি দমে যায়নি, ক্লাশে রোল-১ তার হওয়া চাই ই চাই। এবার SSC পরীক্ষায় সে তার পরিশ্রমের প্রতিদান পেয়েছে। সকল বিষয়ে A+, মানে গোল্ডেন A+ পেয়েছে।


জ্যোতির স্বপ্ন সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে। জ্যোতির স্বপ্ন পূরণে আমরা Moral Parenting Trust সব সময় পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ! জ্যোতি’র Moral Parent বিমান বাহিনীর একজন অফিসার। জ্যোতির মতো এমন অসংখ্য অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করতে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

স্বাদমীন

স্বাদমীন

খুবই লাজুক আর শান্ত শিষ্ট স্বভাবের মেয়ে স্বাদমীন। বাবা’র খুব আদরের মেয়ে ছিল। পড়াশুনায় বরাবরই ভাল; তাই বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে।

কিন্তু বাবা’র স্বপ্ন পূরণের আগেই দুঃস্বপ্নের মত বাবা হারিয়ে যান ওর জীবন থেকে আজীবনের জন্য। বাবা বেঁচে থাকতে ওদের আর্থিক অবস্থা মুটামুটি ভাল ছিল। বাবা’র মৃত্যুর পর সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়।

মা সামান্য বেতনে একটা স্কুলে চাকুরী করেন, সেই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে জীবনযাপন খুবই কষ্টের। তবে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন, মেয়ের পড়াশুনায় যেন কোন ক্ষতি না হয়। স্বাদমীন এবার SSC পরীক্ষায় GPA-5 পেয়েছে।

আমরা, Moral Parenting Trust স্বাদমীনের পাশে আছি, থাকব যতদিন প্রয়োজন হয়। স্বাদমীনের Moral Parent কানাডা প্রবাসী আমাদের এক বোন।