আমাদের মোরাল চিলড্রেনরা শুধু সমাজ থেকে সাহায্য নেই না, তারা সাধ্যমত বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। মোরাল প্যারেন্টিং এর মূল লক্ষ্য, নৈতিক সমাজ গঠনে অবদান রাখা। নৈতিক সমাজ গঠন করতে হলে প্রথমে দরকার নৈতিক মানুষ। আমাদের মোরাল চিলড্রেনরা নৈতিক মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণ স্বরূপ তাদের সাধ্যমত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে ভলান্টিয়ার টিম গঠন করা হয়েছে; তারা তাদের ক্যাম্পাসের আশেপাশে নিম্নলিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেঃ
মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্ট ( www.moralparenting.org ) সারাদেশে হাজার খানিক অদম্য মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। মোরাল চিলড্রেনদের (শিক্ষার্থী) যে পরিমান বৃত্তি দেওয়া হয় তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। দৈনন্দিন খরচ চালাতে তারা টিউশনির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মফঃস্বল শহরে টিউশনি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার; পেলেও তাতে অনেক সময় নষ্ট হয়, পড়াশুনার ক্ষতি হয় কিন্তু বেতন সেই তুলনায় খুবই কম।
অন্যদিকে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করেছেন, যে সকল শিক্ষার্থী পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে তাদের সার্টিফিকেট ছাড়া অন্য কোন কাজের অভিজ্ঞতা নেই; অধিকংশই সন্তোষজনক চাকুরী পাচ্ছে না- তখন তাদের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
এই বিষয় দুটি মাথায় রেখে ছাত্রছাত্রীদেরকে উদ্যোগতা হওয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং খন্ড কালীন কাজের মাধ্যমে কিছু আয় করার উপায় তৈরির উদ্দেশ্যে Root’s Goods BD নামের এই ব্যতিক্রমী প্ল্যাটফর্ম টি তৈরি করা হয়েছে।
Root’s Goods BD মূলত তিনিটি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ঃ
১) বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের “নৈতিক ব্যবসা” শেখা এবং খন্ড কালীন কাজ করে আয়ের ব্যবস্থা করা
২) প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদিত বিখ্যাত পন্য মেইন স্ট্রিম মার্কেটে বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করা
৩) বিভিন্ন এলাকার বিখ্যাত এবং অরিজিনাল পন্য সহজে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।
এই মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ভার্সিটি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের এলাকার বিখ্যাত / স্পেশাল পন্য বিক্রি করতে পারবে। প্রত্যন্ত এলাকার পন্য শহরে বিক্রি করতে পারবে, আবার ঢাকায় যে সকল পন্য পাওয়া যায় তা মফঃস্বলে বিক্রি করতে পারবে। একজন তার এলাকার পন্য অনলাইনে উঠিয়ে রাখলে অন্য এলাকার আরেকজন তার এলাকায় সেটা বিক্রি করতে পারবে। এখানে ছাত্রছাত্রীরা শুন্য পুঁজি নিয়ে ব্যাবসা করতে পারবে, কম সময় ব্যয় করে চলার মত টাকা আয় করতে পারবে, সবচেয়ে বড় কথা এখানে ওরা ‘নৈতিক ব্যাবসা’ করে উদ্যোগতা হওয়ার প্রশিক্ষণ পাবে।
Root’s Goods BD ই- কমার্স শপের; ওয়েবসাইটঃ www.rootsgoodsbd.com ; এটি দেশের প্রথম ই-কমার্স শপ যেখানে সকল বিক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
“নৈতিক ব্যবসা” এর কন্সেপ্টে পরিচালিত এই ই- কমার্স শপের বিশেষত্বঃ
১) সকল বিক্রেতা এবং পরিচালনা পর্ষদ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী
২) এক সাইটে সারাদেশের বিখ্যাত / স্পেশাল পন্য পাওয়া যাবে
৩) সরাসরি ক্রেতার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে পন্য ক্রয় ও দাম পরিশোধের ব্যাবস্থা
৪) লিস্টে নাই এমন পন্যও আলোচনার সাপেক্ষে অর্ডার দিয়ে কেনা যাবে (যেমন ঢাকা থেকে নির্দিষ্ট পন্য কিনে পাঠাতে বলা যাবে)
৫) পন্য ও সার্ভিস সম্পর্কে রিভিউ নম্বর এবং কমেন্ট এর মাধ্যমে দেওয়া যাবে যা উক্ত পন্যের পাশে তা দেখানো হবে।
৬) শতভাগ সততা এবং স্বচ্ছতা রক্ষা করে নৈতিক ব্যবসা করতে ছাত্রছাত্রীরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
Root’s Goods BD থেকে সহজে সারাদেশের বিখ্যাত পন্য কেনার মাধ্যমে অদম্য শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ কে সহায়তা করার অনুরোধ করা হল!!
Moral Parenting Trust পরিচালিত আরেকটি প্রজেক্টের নাম Ten Taka Tuition। এটি মূলত ভার্সিটি পর্যায়ের মোরাল চিলড্রেনগন পরিচালনা করে। দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মোরাল চাইল্ড আছে। যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোরাল চাইল্ড সংখ্যা ১০ এর অধিক তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের কোন স্কুলের অতি দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের নাম মাত্র মূল্যে টিউশনি করায়। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে স্কুলেই ব্যাচ করে মোরাল চিলড্রেন গন ক্লাশ নেয়।
অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা টাকার অভাবে টিউশনি পড়তে পারে না, রেজাল্ট খারাপ করে একসময় ঝরে যায়; মূলত এসকল ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার জন্য আমাদের এই প্রজেক্ট। এছাড়া এর ফলে আমাদের মোরাল চিলড্রেনদের সামাজিক কাজের প্রাকটিসও হয়ে যায়।
এখানে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মাসে ১০ টাকা টিউশন ফি নেওয়া হয়। মোরাল চাইল্ড গনকে আলাদা কোন বেতন দেওয়া হয় না, তবে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাদের নাস্তা এবং যাতায়াত বাবদ কিছু টাকা দেওয়া হয়।
দিনাজপুর হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দুটি স্কুলে এই প্রজেক্টের কাজ শুরু করা হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আপাতত সব কাজ বন্ধ আছে; সামনে আবার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ্!!
গত দুই বছরের ন্যায় এবারও আমরা “শীতবস্ত্র উপহার” কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা এই শীতবস্ত্র উপহার কার্যক্রমকে গতানুগতিক ভাবে না করে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করার চেষ্টা করি। এই কাজের স্বচ্ছতা, যথার্থতা এবং মোরাল প্যারেন্টিং এর মূল কন্সেপ্টের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রজেক্টটি এভাবে সাজানো হয়েছেঃ
** Moral Parenting এর ভার্সিটি পর্যায়ের মোরাল চিল্ড্রেনরা তাদের নিজ গ্রামের সবচেয়ে দরিদ্র ১০ জনের (শিশু ও বৃদ্ধ) তালিকা আমাদের কাছে পাঠায়।
** প্রাপ্ত প্রপোজালের যথার্থতা যাচায় সাপেক্ষে আমরা সেই প্রজেক্টের জন্য শীতবস্ত্র কেনার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করি। যারা এরকম উপহার কখনও পাইনি তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
** একটি প্রজেক্টের জন্য ডোনেশনের পরিমান ৫২০০ টাকা। (কাপড় কেনা ৫০০০ + অন্যান্য খরচ ২০০)।
** কোন প্রজেক্টে ডোনেশন পেলে তা দিয়ে উক্ত মোরাল চাইল্ড উল্লেখিত মানুষদের পছন্দমত রঙ, সাইজ অনুযায়ী নতুন শীতবস্ত্র কিনে দিবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তারা নিজেরা দোকানে গিয়ে নিজেদের কাপড় পছন্দ করে নিবে।
** আপনি যে প্রজেক্টের জন্য টাকা দিবেন সেই মানুষগুলো জানবে যে আপনি এটা তাদের উপহার হিসাবে দিয়েছেন; কোন দান বা অনুগ্রহ নয়।
** কাজ শেষে মোরাল চাইল্ড তার কার্যক্রমের বিস্তারিত রিপোর্ট (বিবরণ, হিসাব,গ্রহিতার ঠিকানা, ছবি) দাতার কাছে ইমেইলে পাঠাবে।
এই প্রজেক্ট মূলত দুটি উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ঃ এক- প্রকৃত দুস্থ মানুষকে তার জন্য উপযুক্ত শীতের কাপড় উপহার দেওয়া। দুই- আমাদের মোরাল চিলড্রেনদের সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করা।
গত বছর এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের মোরাল চিল্ড্রেনরা অনেক মর্মস্পর্শী এবং আনন্দদায়ক ঘটনার সাক্ষি হয়েছিল। আশাকরি এবারও কাজটা সফল ভাবে করতে পারব; এবং কিছু প্রকৃত শীতার্ত-দুস্থ মানুষের উপকার করতে পারব। আপনি অর্ধেক, এক বা একাধিক গ্রুপকে শীতবস্ত্র উপহার দিতে পারেন; ২৬০০ টাকার গুণিতক যে কোন এমাউন্ট ডোনেট করতে পারেন।